স্যামসাং মোবাইল কোন দেশের তৈরি?
স্যামসাং মোবাইল কোন দেশের তৈরি?
স্যামসাং মোবাইল দক্ষিণ কোরিয়ার তৈরি—Samsung Electronics মূলত দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক কোম্পানি। তবে স্যামসাং মোবাইল ফোনগুলো শুধুমাত্র দক্ষিণ কোরিয়াতেই তৈরি হয় না, বরং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের উৎপাদন কারখানা রয়েছে।
স্যামসাং মোবাইল ফোন সাধারণত যেসব দেশে তৈরি হয়:
📌 উদাহরণ: আপনি যদি বাংলাদেশে স্যামসাং ফোন কিনেন, সেটা অনেক সময় বাংলাদেশেই তৈরি (Made in Bangladesh)
স্যামসাং কোম্পানির গঠন?
স্যামসাং কোম্পানির গঠন বা স্ট্রাকচার (Structure) একটি জটিল কর্পোরেট কনগ্লোমারেট বা চেবল (Chaebol) হিসেবে গড়ে উঠেছে, যা দক্ষিণ কোরিয়ায় সাধারণত পরিবার-চালিত বৃহৎ ব্যবসায়িক গোষ্ঠী বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
🔹 স্যামসাং কোম্পানির মূল গঠন:
1. Samsung Group (স্যামসাং গ্রুপ)
এটি একটি মূল কর্পোরেট গোষ্ঠী, যার আওতায় বহু ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানি ও সহ-প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এটি ১৯৩৮ সালে লি বেউং-চুল (Lee Byung-chul) প্রতিষ্ঠা করেন।
2. Samsung Electronics (স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স)
এটি স্যামসাং গ্রুপের সবচেয়ে বড় ও লাভজনক শাখা। মোবাইল, টেলিভিশন, সেমিকন্ডাক্টর, চিপ, এবং হোম অ্যাপ্লায়েন্স এখানে তৈরি হয়। এটি আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত।
3. অন্যান্য শাখা ও কোম্পানি:
বিভাগ কাজ বা ভূমিকা
Samsung Heavy Industries জাহাজ নির্মাণ এবং মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং
Samsung Engineering কনস্ট্রাকশন ও ইঞ্জিনিয়ারিং সল্যুশন
Samsung C&T Corporation ট্রেডিং ও কনস্ট্রাকশন
Samsung SDS IT সল্যুশন ও ডেটা ম্যানেজমেন্ট
Samsung Life Insurance বিমা ও আর্থিক সেবা
Samsung Biologics বায়োটেক ও ফার্মাসিউটিক্যাল উৎপাদন
4. পরিবার-চালিত নিয়ন্ত্রণ:
স্যামসাং-এর উপর নিয়ন্ত্রণ এখনো লি পরিবার-এর হাতে। প্রতিষ্ঠাতার ছেলে লি কুন-হি এবং বর্তমানে তার ছেলে লি জে-ইয়ং (Lee Jae-yong) নেতৃত্বে রয়েছেন (চেয়ারম্যান বা এক্সিকিউটিভ পদে)।
5. আন্তর্জাতিক শাখা ও ব্যবসা:
স্যামসাং-এর অফিস ও উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, চীন, ভারত, বাংলাদেশ, ভিয়েতনামসহ বহু দেশে।
স্যামসাং কোম্পানির গল্প কি?
স্যামসাং কোম্পানির গল্পটি (Samsung's story) হলো একটি ছোট ব্যবসা থেকে শুরু করে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রযুক্তি সাম্রাজ্যে পরিণত হওয়ার এক অনুপ্রেরণাদায়ক যাত্রা। এটি শুধুমাত্র প্রযুক্তির গল্প নয়, বরং পরিশ্রম, উদ্ভাবন, সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়ানো এবং নেতৃত্বের এক ব্যতিক্রমী ইতিহাস।
📖 স্যামসাং কোম্পানির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও গল্প:
🔹 ১. শুরুটা ছোট থেকে (১৯৩৮)
স্যামসাং-এর যাত্রা শুরু হয় ১৯৩৮ সালে, যখন লি বেউং-চুল (Lee Byung-chul) দক্ষিণ কোরিয়ার ডেগু শহরে একটি ছোট ট্রেডিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।
এই কোম্পানির কাজ ছিল চাল, মাছ, ফলমূল, এবং নুডলস রপ্তানি করা।
👉 "স্যামসাং (Samsung)" শব্দের অর্থ কোরিয়ান ভাষায় "তিনটি তারকা" – যা প্রতীক করে বড়, শক্তিশালী ও চিরস্থায়ী কিছুকে।
🔹 ২. শিল্পে প্রবেশ (১৯৬০-এর দশক)
কোরিয়ান যুদ্ধের পর স্যামসাং ধীরে ধীরে টেক্সটাইল ও ইলেকট্রনিক্স শিল্পে প্রবেশ করে।
১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় Samsung Electronics, যা পরবর্তীতে মোবাইল ফোন ও টেলিভিশনের মাধ্যমে বিশ্বে বিখ্যাত হয়ে ওঠে।
🔹 ৩. টেক দুনিয়ায় আধিপত্য (১৯৮০-৯০ এর দশক)
স্যামসাং ১৯৮০-এর দশকে সেমিকন্ডাক্টর ও মাইক্রোচিপ উৎপাদনে বিনিয়োগ করে।
এবং ১৯৯৩ সালে, প্রতিষ্ঠাতার ছেলে লি কুন-হি নেতৃত্ব নেন এবং বলেন:
🗣 "Let’s change everything except your wife and children."
– অর্থাৎ, কোম্পানিকে একদম বদলে ফেলতে হবে।
এ সময় তারা "কোয়ালিটি ফার্স্ট" পলিসি নেয় এবং জাপানি কোম্পানির মতো মানসম্পন্ন পণ্য তৈরিতে মনোযোগ দেয়।
🔹 ৪. গ্লোবাল বিপ্লব (২০০০-এর দশকে)
স্যামসাং দ্রুত মোবাইল ফোন, LCD, LED, স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট উৎপাদনে বিশ্বজুড়ে সেরা হয়ে ওঠে।
২০১০ সালে তারা Galaxy সিরিজ চালু করে, যা আইফোনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
🔹 ৫. চ্যালেঞ্জ ও ঘুরে দাঁড়ানো
২০১6 সালে Galaxy Note 7 বিস্ফোরণ কেলেঙ্কারি হয়, এটি বড় ধাক্কা ছিল।
কিন্তু স্যামসাং দায়িত্ব নিয়ে গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে আনে।
লি পরিবারকে ঘিরে আইনি বিতর্কও ছিল, তবে কোম্পানি টিকে থাকে নেতৃত্বে ধারাবাহিকতা ও উদ্ভাবনের কারণে।
🌐 আজকের স্যামসাং:
বিশ্বের ১ নম্বর স্মার্টফোন নির্মাতা
সেমিকন্ডাক্টর, ৫জি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিসপ্লে প্রযুক্তিতে বিশ্বে নেতৃত্বে
কর্মী সংখ্যা: প্রায় ৩ লাখ+
৭০টিরও বেশি দেশে কার্যক্রম
🎯 স্যামসাং-এর গল্পের মূল বার্তা:
"একটি ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানও যদি সঠিক দৃষ্টি ও নেতৃত্ব পায়, তবে সেটি বিশ্বজয় করতে পারে।"
স্যামসাং এর অবস্থান কত?
আপনি যদি “স্যামসাং-এর অবস্থান কত?” বলতে কোম্পানির বিশ্বে র্যাংকিং বা অবস্থান বোঝাতে চান, তাহলে নিচে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করছি:
🌍 স্যামসাং-এর বিশ্বে অবস্থান (২০২4-2025 অনুযায়ী):
🔹 ১. স্মার্টফোন মার্কেটে অবস্থান:
Samsung বর্তমানে বিশ্বের ১ নম্বর স্মার্টফোন নির্মাতা (মার্কেট শেয়ার অনুসারে)।
এটি প্রতি বছর ৩০-৩৫ কোটি স্মার্টফোন বিক্রি করে।
প্রতিদ্বন্দ্বী: Apple, Xiaomi, Oppo, Vivo।
📊 2024 সালের Q4 তে গ্লোবাল স্মার্টফোন মার্কেট শেয়ার:
কোম্পানি মার্কেট শেয়ার
Samsung ~20%
Apple ~18-19%
Xiaomi ~12%
🔹 ২. সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে:
Samsung Electronics হলো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চিপ নির্মাতা, Intel-এর পরে বা কিছু সময় Intel-কে অতিক্রমও করে।
DRAM, NAND ফ্ল্যাশ মেমরি ও প্রসেসর তৈরিতে শীর্ষস্থানীয়।
🔹 ৩. ফরচুন গ্লোবাল ৫০০ তালিকায় অবস্থান (2024):
Samsung Electronics-এর অবস্থান: ২০তম (প্রায়)
Samsung Group-এর সামগ্রিক রেভিনিউ: প্রায় ২৫০+ বিলিয়ন ডলার (বছরে)
🔹 ৪. গ্লোবাল ব্র্যান্ড ভ্যালু (Brand Value):
Interbrand-এর রিপোর্ট অনুযায়ী:
Samsung বিশ্বের টপ ৫ ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে (Apple, Microsoft, Amazon, Google-এর পরে)।
ব্র্যান্ড মূল্য: ~৮৭ বিলিয়ন ডলার (2024 অনুযায়ী)
🔹 ৫. দেশ অনুযায়ী কার্যক্রম:
Samsung-এর ৭০টির বেশি দেশে অফিস ও ফ্যাক্টরি আছে।
প্রধান কার্যালয় (Headquarters):
📍 Suwon, South Korea
✅ সারাংশ:
ক্যাটাগরি অবস্থান
স্মার্টফোন বাজার ১ম
সেমিকন্ডাক্টর ১ম/২য়
ফরচুন গ্লোবাল ৫০০ শীর্ষ ২০
ব্র্যান্ড মূল্য শীর্ষ ৫
হেডকোয়ার্টার দক্ষিণ কোরিয়া (Suwon)
S24 ultra তৈরি করেছে কোন দেশ?
Samsung Galaxy S24 Ultra তৈরি করেছে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স, যার মূল কোম্পানি দক্ষিণ কোরিয়ার (South Korea)। তবে এই ফোনটি শুধু দক্ষিণ কোরিয়ায় তৈরি হয় না — এটি বিভিন্ন দেশে অ্যাসেম্বল বা তৈরি হয়, নির্দিষ্ট বাজার অনুযায়ী।
📍 Galaxy S24 Ultra কোন দেশে তৈরি হতে পারে?
➤ সাধারণত S24 Ultra তৈরি হয় নিচের দেশগুলিতে:
দেশ ভূমিকা
দক্ষিণ কোরিয়া হাই-এন্ড ইউনিট ও গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D)
ভিয়েতনাম বৃহৎ পরিসরে উৎপাদন ও এক্সপোর্ট
ভারত ভারতীয় বাজারের জন্য উৎপাদন
ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, বাংলাদেশ স্থানীয় বাজারের জন্য উৎপাদন
👉 আপনি যদি বাংলাদেশে Galaxy S24 Ultra কিনে থাকেন, সেটি হতে পারে:
Made in Vietnam
অথবা Made in Korea (বিশেষ করে প্রথম ব্যাচে)
কিছু ক্ষেত্রে Made in Bangladesh (যদি স্থানীয় অ্যাসেম্বলি হয়ে থাকে)
🔍 কীভাবে জানবেন আপনার ফোন কোন দেশে তৈরি?
ফোনের বক্সে “Made in...” উল্লেখ থাকে।
ফোনের সেটিংসে গিয়ে ➤ Settings > About Phone > Software Information বা “Regulatory Labels” অংশে আপনি তৈরি দেশ সম্পর্কিত তথ্য পেতে পারেন।
✅ সারাংশ:
Galaxy S24 Ultra দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানির তৈরি, তবে এটি ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত সহ বিভিন্ন দেশে তৈরি হয়ে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ করা হয়।
আপনি কি জানতে চান আপনার Galaxy S24 Ultra নির্দিষ্টভাবে কোন দেশে তৈরি হয়েছে? তাহলে আপনি ফোনের মডেল নম্বর দিলে আমি সাহায্য করতে পারি।
স্যামসাং এর সিইও কে?
বর্তমানে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স-এর একক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জুন ইয়ং-হিউন (Jun Young-hyun)। তিনি ২০২৫ সালের মার্চ মাসে সহ-সিইও হান জং-হি (Han Jong-hee)-এর আকস্মিক মৃত্যুতে একক সিইও হিসেবে নিয়োগ পান। হান জং-হি ২০২২ সাল থেকে সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং তিনি কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স ও মোবাইল ডিভাইস বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। তার মৃত্যুর পর জুন ইয়ং-হিউন, যিনি আগে সেমিকন্ডাক্টর বিভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, কোম্পানির একক সিইও হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
জুন ইয়ং-হিউন স্যামসাং ইলেকট্রনিক্সের সেমিকন্ডাক্টর ডিভিশন (Device Solution) এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০২৪ সালে সিইও হিসেবে নিয়োগ পান এবং ২০২৫ সালের মার্চ মাসে হান জং-হি-র মৃত্যুর পর একক সিইও হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
এছাড়া, স্যামসাং গ্রুপ এর নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে লি জে-ইয়ং (Lee Jae-yong) দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০২২ সালে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান এবং স্যামসাং গ্রুপের সামগ্রিক নেতৃত্বে রয়েছেন।
অতএব, স্যামসাং ইলেকট্রনিক্সের একক সিইও হিসেবে জুন ইয়ং-হিউন দায়িত্ব পালন করছেন, এবং স্যামসাং গ্রুপের নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে লি জে-ইয়ং রয়েছেন।
স্যামসাং ফোনের মালিক কে?
স্যামসাং ফোনের মালিকানা মূলত Samsung Electronics Co., Ltd.-এর হাতে, যা Samsung Group-এর অংশ। তবে যদি আপনি জানতে চান, "Samsung ফোনের আসল মালিক বা নেতৃত্বে কে?", তাহলে সেটি একটু ব্যাখ্যা দরকার।
📱 Samsung ফোনের মালিক কে?
✅ প্রতিষ্ঠানিক মালিক:
Samsung Electronics হলো সেই কোম্পানি, যারা Samsung ফোন ডিজাইন, তৈরি ও বাজারজাত করে।
এটি একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি (Public Company), অর্থাৎ এর মালিকানা বিভিন্ন শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে ভাগ করা।
শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বড় অংশ রয়েছে:
Samsung Life Insurance
Samsung C&T
মিউচুয়াল ফান্ড, ব্যাংক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।
👤 নেতৃত্ব বা প্রধান ব্যক্তি:
লি জে-ইয়ং (Lee Jae-yong) — Samsung Group-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান (Executive Chairman) এবং কার্যত Samsung ব্র্যান্ডের শীর্ষ নেতা।
তিনি স্যামসাং-এর প্রতিষ্ঠাতা লি বেউং-চুল এর নাতি এবং লি কুন-হি-র ছেলে।
📍 সারাংশ:
প্রশ্ন উত্তর
Samsung ফোনের নির্মাতা Samsung Electronics Co., Ltd.
কোম্পানির মালিকানা শেয়ারহোল্ডার ও Samsung Group
নেতৃত্ব দিচ্ছেন লি জে-ইয়ং (Lee Jae-yong)