হযরত আবু বকর (রা:) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
![]() |
হযরত আবু বকর (রা:) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী |
ইসলামের ১ম খলিফা হযরত আবু বকর (রা:)।তিনি আশারাতুল মুবাশশারার অন্তর্ভুক্ত।হযরত মুহাম্মদ (স:) এর প্রিয় সাহাবি ছিলেন।তাছাড়া ইসলামের প্রথম মুসলিম পুুুুরুষ হযরত আবু বকর (র:)।
(৫৭৩-৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দ)। ইসলাম ধর্মের প্রথম খলিফা, হযরত মুহম্মদ (সাঃ)-এর শ্বশুর। মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশে ৫৭৩ খ্রিষ্টাব্দে হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর বাল্য নাম ছিল আবদুল্লাহ্, আবু বকর ছিল তার ডাক নাম।
ইসলাম গ্রহণ করিবার পর তিনি সিদ্দীক (সত্যবাদী) এবং আতিক (দানশীল) খেতাব লাভ করেছিলেন। আবু বকরের পিতার নাম ছিল ওসমান, কিন্তু ইতিহাসে তিনি আবু কুহাফা নামেই সুপরিচিত ছিলেন। তাঁর মাতার নাম উম্মুল খায়ের সালমা। আবু বকরের মাতাপিতা উভয়েই বিখ্যাত কুরাইশ বংশের তায়িম গোত্রের লোক ছিলেন। তার মা প্রথমদিকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং পিতা হিজরীর অষ্টম বৎসরে ইসলামে দীক্ষিত হন।
🟩হযরত আবু বকর (রা:) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
▪️ পূর্ণ নাম:
আবদুল্লাহ ইবন আবু কুহাফা উসমান ইবন আমির
▪️ জন্ম:
৫৭৩ খ্রিষ্টাব্দ, মক্কায়, কুরাইশ গোত্রে
▪️ ইসলাম গ্রহণ:
তিনি ছিলেন প্রথম পূর্ণবয়স্ক পুরুষ যিনি ইসলাম গ্রহণ করেন (খাদিজা (রাঃ) প্রথম নারী, আলী (রাঃ) প্রথম শিশু)। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি দ্বীনে ইসলাম কবুল করেন।
▪️ খেতাব:
রাসুল (সা.) তাঁকে উপাধি দেন "আস-সিদ্দিক" (যিনি সর্বদা সত্যকে সমর্থন করেন)।
বিশেষ করে মিরাজ ঘটনার সময় তিনি নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করেন এবং এই খেতাব পান।
🟨 রাসুল (সা.)-এর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী
আবু বকর (রাঃ) ছিলেন নবী করিম (সা.)-এর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও প্রিয় সঙ্গীদের একজন।
হিজরত (মক্কা থেকে মদিনা) কালে রাসুল (সা.)-এর একমাত্র সঙ্গী ছিলেন।
তিনি ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শ্বশুর, কারণ তাঁর কন্যা আয়েশা (রাঃ) ছিলেন রাসুল (সা.)-এর স্ত্রী।
🟩 খিলাফত লাভ
▪️ শাসনকাল:
৬৩২ খ্রিঃ - ৬৩৪ খ্রিঃ (মোট প্রায় ২ বছর ৩ মাস)
▪️ খলিফা নির্বাচিত হওয়া:
নবী (সা.)-এর ওফাতের পর সাহাবাদের পরামর্শে তাঁকে প্রথম খলিফা নিযুক্ত করা হয়। তিনি বলেন:
"আমিই সর্বোত্তম নই; যদি আমি ভাল করি, আমাকে সহযোগিতা করো। আর ভুল করলে আমাকে সঠিক পথে ফেরাও।"
🟨 তাঁর শাসনামলের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা
১. রিদ্দাহ যুদ্ধ (মুরতাদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ)
নবী (সা.)-এর ওফাতের পর অনেক গোত্র ইসলাম ছেড়ে দেয় বা জাকাত দিতে অস্বীকার করে।
আবু বকর (রাঃ) কঠোরভাবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন এবং মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ রাখেন।
২. মুসাইলিমা কذابের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
নিজেকে নবী দাবি করা মুসাইলিমা ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হয় – যুদ্ধে সহাবী সাইফুল্লাহ খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) নেতৃত্ব দেন।
৩. কুরআনের সংকলন
ইয়ামামার যুদ্ধে অনেক হাফেজ শহীদ হলে, আবু বকর (রাঃ) হজরত উমর (রাঃ)-এর পরামর্শে কুরআন সংকলনের সিদ্ধান্ত নেন।
হজরত জাইদ ইবন সাবিত (রাঃ)-কে দায়িত্ব দেন; এটি ছিল প্রথম সরকারিভাবে লিখিত কুরআন।
🟩 ব্যক্তিত্ব ও গুণাবলি
অত্যন্ত বিনয়ী, নম্র ও আল্লাহভীরু ছিলেন।
দানশীলতা: নিজের সমস্ত সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে দিতেন।
একবার নবী (সা.) জিজ্ঞাসা করেন, "তুমি পরিবারের জন্য কিছু রাখোনি?"
তিনি বলেন: "আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই আমার পরিবারের জন্য যথেষ্ট।"
দাসদের মুক্ত করায় অগ্রণী ছিলেন (যেমন: হজরত বিলাল (রাঃ)-কে মুক্ত করেন)।
🟥 মৃত্যু
তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং হিজরি ১৩ সনে (২৩ আগস্ট ৬৩৪ খ্রিঃ) মদিনায় ইন্তেকাল করেন।
তাঁকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পাশেই দাফন করা হয়, মসজিদে নববীর ভেতরে।
🔹 ইসলামী ইতিহাসে গুরুত্ব
তিনি ছিলেন ইসলামের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রথম স্থপতি।
তাঁর সাহসিকতা, বিচক্ষণতা ও আধ্যাত্মিকতা পরবর্তী খলিফাদের জন্য আদর্শ হয়ে ওঠে।